টেনিস এলবো বা Tennis Elbow (Lateral Epicondylitis) একটি সাধারণ কিন্তু কষ্টকর সমস্যা, যা শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দৈনন্দিন কাজে বারবার হাতের একই ধরনের নড়াচড়া, ভারী কাজ, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার—এসব কারণেও টেনিস এলবো হতে পারে।
অনেক রোগী এটিকে সাধারণ হাতের ব্যথা ভেবে অবহেলা করেন। কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা না নিলে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যেতে পারে এবং কাজের সক্ষমতা কমে যায়।
এই অবস্থার জন্য শুধুমাত্র টেনিস খেলাই দায়ী নয়; কবজি ও বাহুর পুনরাবৃত্তিমূলক ব্যবহার বা অতিরিক্ত চাপই প্রধান কারণ:
অতিরিক্ত ব্যবহার (Overuse): কবজি এবং আঙুল সোজা করার জন্য ব্যবহৃত পেশিগুলির উপর ঘন ঘন এবং অতিরিক্ত চাপ পড়লে এই সমস্যা দেখা দেয়।
পেশাগত কাজ: কাঠমিস্ত্রি, প্লাম্বার, রাঁধুনি, কসাই, বা যারা দীর্ঘক্ষণ ধরে কম্পিউটারে টাইপ বা মাউস ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি।
খেলাধুলা: র্যাকেট-ভিত্তিক খেলাধুলা (যেমন টেনিস, ব্যাডমিন্টন) যেখানে কব্জির ভুল কৌশল ব্যবহার করা হয়।
হঠাৎ আঘাত: কনুইতে সরাসরি আঘাত বা অতিরিক্ত মোচড়ানোর কারণেও হতে পারে।
ব্যথা: কনুইয়ের ঠিক বাইরের দিকে তীব্র বা দপদপে ব্যথা। ব্যথা বাহু এবং কবজি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্পর্শকাতরতা: আক্রান্ত স্থানটি স্পর্শ করলে বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হয়।
কাজের অসুবিধা:
কোনো বস্তু আঁকড়ে ধরা (Gripping) বা ওঠানো (Lifting) কঠিন হয়ে যায়।
দরজার নক ঘুরানো বা বোতলের ছিপি খোলার সময় ব্যথা বাড়ে।
হাত মেলানো (Handshake) বা লেখার সময়ও ব্যথা হতে পারে।
দুর্বলতা: বাহুর পেশিতে দুর্বলতা অনুভব করা।
নিচের যেকোনো অবস্থায় দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন—
ব্যথা ২–৩ সপ্তাহেও না কমলে
কাজকর্মে সমস্যা শুরু হলে
বিশ্রাম নিলেও ব্যথা থাকলে
ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে
সময়মতো চিকিৎসা নিলে অপারেশন ছাড়াই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই (৮০-৯৫ শতাংশ) অস্ত্রোপচার ছাড়া অন্য চিকিৎসায় এটি সেরে যায়। সম্পূর্ণ আরোগ্য হতে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
বিশ্রাম (Rest): প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যে কাজগুলি ব্যথা সৃষ্টি করে, সেগুলি কয়েক সপ্তাহের জন্য বন্ধ বা সীমিত রাখুন।
বরফ সেক (Ice Application): দিনে ৩-৪ বার ১৫-২০ মিনিটের জন্য আক্রান্ত স্থানে বরফ প্রয়োগ করুন (প্রদাহ ও ফোলা কমাতে)।
ব্যথা নিয়ন্ত্রণ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ (যেমন NSAIDs) সেবন করা যেতে পারে।
ব্রেস বা স্প্লিন্ট (Brace/Splint): কনুই বা কব্জিতে বিশেষ বন্ধনী (কাউন্টার-ফোর্স ব্রেস) ব্যবহার করলে পেশীর উপর চাপ কমতে পারে।
ফিজিওথেরাপি: নির্দিষ্ট ব্যায়াম (স্ট্রেচিং ও শক্তিশালীকরণের ব্যায়াম) টেন্ডনের নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইনজেকশন: গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ইনজেকশন বা পিআরপি (Platelet-Rich Plasma) থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
অনেকেই তেল-মলম, ব্যথানাশক বা বিশ্রামের উপর নির্ভর করেন। এতে সাময়িক আরাম মিললেও টেনডনের ক্ষয় বাড়তে থাকে। ফলে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়।
আপনি যদি কনুইয়ের বাইরের অংশে দীর্ঘদিন ব্যথায় ভুগে থাকেন, তাহলে দেরি না করে একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসাই টেনিস এলবো থেকে মুক্তির সবচেয়ে ভালো উপায়।
ইসলামিয়া হাসপাতাল বাংলাদেশ, রায়েরবাগ
এপয়েন্টমেন্ট: 09610995555
তথ্যের জন্যঃ 01898201466
নিয়মিত রোগী সচেতনতা পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো করুন।
Important Note
Aimed at providing insights into various health issues
Not intended for treatment purposes